What is LSD Drugs? এলএসডি কি? আবিষ্কার? গবেষণা? রূপ? ড্রাগ ডোজ? ক্ষতিকর দিক?

What Is LSD Drugs? 

এলএসডি কী?


ঢাবি ছাত্র হাফিজুরের মৃত্যু তদন্তে উঠে এসেছে করালগ্রাসী "এলএসডি" নামক এক নতুন নেশার নাম।নামটা পুরোনো কিন্তু এর সাথে বাংলাদেশের অপরাধ জগতের সম্পৃক্ত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম। লেখকের বইয়ে, টিভির পর্দায় আমরা "এলএসডি" র নাম আগে শুনে থাকলেও বর্তমানে বাংলাদেশের যুবকদের জন্য হয়ে দাড়িয়েছে এক ঝুকির নাম।









এলএসডি কী ?

এলএসডি একটি মন পরিবর্তনকারী ড্রাগ। এলএসডি মস্তিষ্কের সেরোটোনিন নামক রিসেপ্টরগুলোর সাথে মিথস্ক্রীয়ায়  মস্তিষ্কে এর  হ্যালুসিনোজেনিক প্রভাবগুলোর কারণ ঘটায়। সেরোটোনিন একটি নিউরোট্রান্সমিটার যেটি আপনার আচরণ ও মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে।আপনার ইন্দ্রিয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করে এবং আপনাকে চিন্তা করতে সাহায্য করে।এই ড্রাগ গ্রহণের সাথে সাথে আশে পাশের চিত্রপট সহ বাস্তবিক চিন্তা ভাবনা বদলাতে শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনস্থ মাদক বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ড্রাগ অ্যাবিউজের তথ্য অনুযায়ী, এলএসডি( ডি-লাইসার্জিক অ্যাসিড ডায়েথিলামাইড) সংশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি একটি পদার্থ যা রাই এবং বিভিন্ন ধরণের শস্যের গায়ে জন্মানো এক বিশেষ ধরনের ছত্রাকের শরীরের লাইসার্জিক অ্যাসিড থেকে তৈরি করা হয়।এটি স্বচ্ছ,গন্ধহীন পদার্থ তবে এর স্বাদ একটু তেতো।১৯৩৮ সালে প্রথম বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে এলএসডি অপ্রত্যাশিত ভাবে তৈরী হয়ে যায়।এর উপাদান এতটাই ভয়ংকর যে, এলএসডি মাইকোগ্রামের  হিসেবে ব্যবহার হয় যেখানে অন্যান্য নেশা দ্রব্য গ্রাম এর ভিক্তিতে নেশার বা উদ্দিপনার সৃষ্টি করে।মনের উপর প্রভাব ফেলে মানুষের মনে ভীতিকর অনুভূতির  সৃষ্টি করতে পারে। এই অনুভূতির নাম দেওয়া হয়েছে "ব্যাড ট্রিপ"

এলএসডি সাইকাডেলিক ড্রাগ।  এই ধরনের মাদকের প্রভাবে বাস্তবতাকে অন্যভাবে দেখে, এর প্রভাবে হ্যালুসিনেট ও অবাস্তব কল্পনা বাস্তব বলে মনে হয়। 

এই ড্রাগ ডট,ট্রিপস,এসিড, উইন্ডো পেন নামেও পরিচিত



এলএসডির আবিষ্কারক ঃ

১৯৩৮ সালে  আলবার্ট হফম্যান নামে একজন রসায়নবিদ "এরগট"  নামক এক ধরণের প্যারাসাইটিক ফাঙ্গাস নিয়ে কাজ করেন।তিনি মূলত চেয়েছিলেন রক্তচাপ, মস্তিষ্কের কার্যকারিতার উন্নতি শ্বাসপ্রশ্বাস প্রাণিত করার ওষুধ তৈরি করতে আর এর জন্য lysergic acid নিয়ে কাজ করছিলেন হফম্যান।মানুষের প্রতিটা সৃষ্টির পিছনে একটি ভুল থাকে তেমনি ভাবে তখন হঠাৎ করেই নিজের অজান্তে LSD নামক  আধুনিককালের সবচেয়ে শক্তিশালী ও ভয়াবহ ড্রাগের প্রভাব আবিষ্কার করে ফেললেন হফম্যান, যার পুরো নাম লিসার্জিক এসিড ডাইথ্যালামাইড।

তবে আবিষ্কারের পর কোনো গবেষক ও বিজ্ঞানীর কাছে এটি নিয়ে তেমন গুরুত্ব পেলেন না যার ফলে কাজটা তখন সেখানেই স্থগিত হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু হফম্যান হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না। তিনি আবারো ৫ বছর পর এলএসডি নিয়ে কাজ করলেন এবং এইবার তিনি নিজেও একদিন ২৫ মাইক্রোগ্রাম এলএসডি নিজে তার জিহবাতে দিয়ে এর পরীক্ষা করেন এতে তিনি নিজে এর প্রতিক্রিয়া অনুভব করেন, এ যেনো এক অন্য দুনিয়া যেখানে তার সাথে হ্যালুসিনেশন ঘটছে  এবং পরবর্তীতে এর ১০ গুন মানে প্রায় ২৫০ মিলিগ্রাম নিজে গ্রহণ করেন এবং এর প্রতিক্রিয়া যে কতটা ভয়াবহ তা নিজে উপলব্ধি করলেন। ভয় পেয়ে প্রথমে ডাক্তার ডেকেছিলেন। ডাক্তার দেখলেন তার ব্লাডপ্রেশার, হার্টরেট, শ্বাসপ্রশ্বাস সবই ঠিক চলছে। সহকর্মীরা সকলেই স্বাদহীন, বর্ণহীন, রংহীন সেই সাইকেডেলিক ড্রাগ টেস্ট করে এক মত হলেন যে, এটি এমন এক নতুন জিনিস যা চিন্তা-ভাবনাকে প্রভাবিত করে অন্য বিজন মুক্ত দুনিয়ার খোঁজ দেয়।



এলএসডি বিষয়ক গবেষণা ঃ

১৯৩৮ সালে এলএসডি গবেষণা থেমে যাওয়ার পর ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত গবেষকেরা এলএসডি নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালান শুধুমাত্র চিকিৎসা ক্ষেত্রে এর ব্যবহারের জন্য।  ১৯৩৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র সকল প্রকার সাইকেডেলিক ড্রাগ নিষিদ্ধ করে। ১৯৭০ সালে জাতিসংঘ চিকিৎসা ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করলে এর গবেষণা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় তবে কিছু কিছু দেশে মানসিক রোগী,বিষণ্ণতা বিষয়ক অন্যান্য রোগে এর ব্যবহারের জন্য গবেষণা চালিয়ে যায়। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের একটি গবেষণায় প্রকাশ পায় যে,চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সুনির্দিষ্ট ডোজের মাধ্যমে অসুস্থতার জন্য ঘটে থাকা  দুশ্চিন্তার চিকিৎসায় এলএসডি ব্যবহার করা যায়। 


এলএসডি ডোজঃ

অন্যান্য ড্রাগ দিয়ে মস্তিষ্ক বিভ্রম করতে যেখানে গ্রাম পরিমা৷  ড্রাগ ইউজ করা হয় যেখানে এলএসডি মাত্র ৪০ মাইকোগ্রাম থেকে ৫০০ মাইকোগ্রাম ইউজ করলেই এটি মস্তিষ্ক বিভ্রম তৈরী করতে সক্ষম। আপনাদের মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য বলছি ১ মাইকোগ্রাম হচ্ছে ১ গ্রামের ১০ লক্ষ ভাগের ১ ভাগ। এইবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন বালুকণার থেকে ছোট একটু এলএসডি আপনার শরীরে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে।




এলএসডির রূপঃ


এলএসডি সাধারণট ক্রিস্টালাইন ফর্মে থাকে। 


এটি বিভিন্ন রূপে পাওয়া যায়, যেমনঃ

১.ব্লটার পেপার (ড্রাগ ব্লটার পেপারে আকর্ষণীয় করা বিক্রি করা হয়। এর অন্য নাম পার্পল ড্রাগন )

২.জেলেটিনের পাতলা স্কোয়ার ( এর নাম উইন্ডো পেন)

৩.ট্যাবলেট 

৪.খাটি তরল ফর্ম(সুগার কিউবের মধ্যে বিক্রি করা হয়)

৫.কেউ কেউ নিশ্বাসের সাথে অথবা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে গ্রহণ করে।


এলএসডির ক্ষতিকর দিকঃ

২০১৭ সালের এক গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে যে,শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র,কানাডা এবং যুক্তরাজ্যে ১৯৫৩ -২০১৭ সালের মধ্যে এলএসডির জন্য ৬৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে এলএসডি গ্রহণের পরে শারীরিক জটিলতায়।

এলএসডি গ্রহণের পরে অনেকে মনে করে যে সে অতিমানবিক কোনো কিছুর অংশ হয়ে গেছেন এবং অবাস্তব কে বাস্তব বলে ধরে নেন যার কারণে বিভিন্ন দূর্ঘটনা ঘটে যেমনটা হয়েছিল ঢাবি ছাত্র হাফিজুরের ক্ষেত্রে।  নেশা থাকাকালীন সময়ে অনেকে বাসার ছাদ থেকে রাস্তা ভেবে লাফিয়ে পরেছে এমন ঘটনাও নথিবদ্ধ হয়েছে।অনেকে এলএসডি গ্রহণের পরে আতংকিত হয়ে বিভিন্ন দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন, সে ভাবে যে সে আর বাচবে না।আতংকিত হওয়ার ফলে শরীরের মানসিক ও শারিরীক অবস্থার পরিবর্তন এত দ্রুত ঘটে যে সেইটা সামাল দেওয়ার ক্ষমতা ড্রাগ সেবনকারীর থাকে না ফলে তার মৃত্যু তাকে ঘিরে ধরে। এলএসডি গ্রহণের পূর্বে কেউ ই এর বাজে অভিজ্ঞতা কল্পনাও করতে পারবে না। করালগ্রাসী এই মাদক মৃত্যুর সাথে বন্ধুত্ব ছাড়া আর কিছু না। 


এছাড়াও ড্রাগ সেবনকারীর রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে,তাপমাত্রা বাড়তে পারে,শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা ছাড়াও নানাবিধ মানসিক সমস্যা।


একটি গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে,,এলএসডি গ্রহনের ফলে মস্তিষ্কে সাধারণের চেয়ে একটি সমন্বিত মস্তিষ্ক হলেও এটি মস্তিষ্কের সাথে অন্যান্য অংশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেংগে দেয়। কল্পনাশক্তি বাড়িয়ে দিলেও এর প্রভাব শরীরের নিয়ন্ত্রণ খারাপের দিকে ঠেলে দেয়। এলএসডি গ্রহণের পর শরীরে এর ডোজের হিসেবে ২০ ঘন্টা পর্যন্ত কার্যকর থাকে। ড্রাগটি গ্রহণের ফলে  সহিংস রূপ হতে পারে যেমনটা হাফিজুর নিজের গলায় নিজেই কোপ দিয়েছিল! 


এলএসডি গ্রহণের ঘুমের সমস্যা হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে ঘুম বেশি হয় এবং কারো ক্ষেত্রে অনিদ্রা দেখা দেয়।বেশিরভাগই রাত জাগে আর দিনে ঘুমায় যার ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়।

এলএসডি গ্রহণের ফলে স্বাভাবিক শ্রবণ ও দর্শন ইন্দ্রিয় বেশি করে ফলে ইউরোপ,আমেরিকায় দেখা যায় অনেক শিল্পী বেশিক্ষন গান গাওয়ার জন্য এলএসডি গ্রহণ করেন।

এলএসডি শরীরে ঘাম বাড়িয়ে দেয় এবং দেহের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত করে। 

এলএসডি গ্রহণকারী তার নিজের পরিবার ও বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে যায়, তার হয় নতুন এক জগত। যেই জগতে সে শুধু একা আর তার জন্য অপেক্ষা করে এক ভয়াবহ মৃত্যু। 



পরিশেষে  এলএসডি নিয়ে আমাদের চিন্তা শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে দেশে এলএসডির ব্যবহারের প্রমান মিলেছে, এইটা নিয়ে চিন্তার সময় আমাদের এসে গেছে।

নেদারল্যান্ডসে মাদক আইন খুব কড়া। সেইখান থেকে আমাদের দেশে মাদকের চালান আসার বিষয়ে আমাদের ভাবনা সময় এসে গেছে।



দয়াকরে, সবাই মাদকের খারাপ দিকগুলো প্রচার করুন,মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলুন। মাদক থেকে এই সমাজকে বাচাতে আমাদের ই এগিয়ে আসতে হবে। পরিবারের লোকজন সচেতন হোন যাতে আপনার প্রিয়জন এর করালগ্রাস থেকে রক্ষা পায়।


2 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন