প্রথম পর্ব-
![]() |
প্রথম পর্ব- শাহ্ কখনো পেছনে তাকায় না |
তখনো পূর্ব আকাশে সূর্য উঠে নি!! অথচ এইদিকে ফিসফিস শব্দের ডাকে অন্ধকার রুমটা বৃষ্টির ঝুমঝুম শব্দের মতো লাগছে। গলাটা আর কারো না, মায়ের।
গত ৩ মাস ১৭ দিন যাবত এখন এইটাই মায়ের অন্যতম দায়িত্ব হয়ে দাড়িয়েছে, যদিও শাহ সবসময় বাড়ি আসে না তবে মায়ের মন সেইদিন থেকেই দায়িত্ব পালন করেই যাচ্ছে, এই অপেক্ষায় যে শাহ কখন বাড়িতে আসলো আর আসলেও ওকে ঠিক টাইমে উঠিয়ে দিতে হবে ।
সূর্য সবে উঠি উঠি, যখন পাখিও জেগে উঠে না, বেলী ফুলেরা ঘুমাতে যায় না, তখন মাকে সবার আগে উঠে শাহকে ঘুম থেকে উঠিয়ে এই এলাকার বাইরে পাঠাতে হয়! এইদিকে একান্ত ভয়ার্ত মন, এই বুঝি শাহ এর বাবা ও কে দেখে ফেললো। সে দেখে ফেললে এইবার ছেলের সাথে মাকেও ঘরের বাহির করবে।
মায়ের আবার ডাক, "শাহ্, এই শাহ্, উঠ বাবা, আর ঘুমাস নি একদম "।
এইদিকে শাহ্ এর বেজায় ঘুম, ঘুম চোখেই বললো,
"মা,তুমি, আজকে একটু আগেই চলে এলে মনে হয়?"
উৎকন্ঠায় ভরা মায়ের গলায় বলে উঠলো, "না, বাবা, উঠে পড়, আমি কি আর চাই তোকে তাড়িয়ে দিতে! আমি পারলে তোকে এই চোখের কোটরে লুকিয়ে রাখতাম "।
মাকে টান দিয়ে সামনে বসিয়ে শাহ উলটো আরো মায়ের কোলে শুয়ে পড়লো। হেসে বললো, "মা,তোমার কন্ঠে যখন তুমি আমাকে উঠাও তখন তো আমার আরো ঘুম চলে আসে । ঘুমের এলার্মে আমার ঘুম ভাঙ্গলেও তোমার এলার্মের ডাকে আমার আরও গভীর ঘুম আসে, এত মায়া আমি আর কোনো ডাকে পাই নি। আমার তো মনে হচ্ছে আমি সারাজীবন ই তোমাকে এই ভাবে জ্বালাবো আর তুমি আমাকে এইভাবে উঠিয়ে দিবে"।.....
"যা পাগল, উঠ" এই বলে মা শাহ্কে জোর করে উঠিয়ে দিলো। শাহ্ উঠে পড়লো, মায়ের অবাধ্য হতে চাইলো না আর। তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে আর টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার দিয়ে দিছি, ট্রলারে উঠে খেয়ে নিবি।
আজ একটু দেরীই হয়ে গেছে, তাকে এইবার ছুটতে হবে। কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে! কলোনীর উচু উচু বিল্ডিং এর ফাক দিয়ে সূর্যের আলো এসে পরে শাহ্ এর চোখে। এই কলোনী,বাজার, লেকের পাড়,নদীর পাড়ে কড়ই তলার বেঞ্চ শাহ্ এর আবেগের জায়গা। হটাৎ বুকটা হালকা কেপে উঠলো! দূ:খ ভারাক্রান্ত মনে চোখ মুছে দ্রত এগিয়ে চললো, এইদিকে হয়তো রাব্বি দাঁড়িয়ে আছে নদীর পাড়ে ট্রলার নিয়ে। ছেলেটারও এই শাহ্ কে নিয়ে জ্বালার শেষ নাই কিন্তু ওকে একলা ছাড়তেও যে ভরশা পায় না! সেই ছোটবেলা থেকে ওরা একসাথে, এরপর স্কুলের গন্ডি পার হয়ে এখন কলেজে। মূলত বলা চলে না, ওরা কলেজে পড়ে,ওরা আসলে কলেজে যায়।
আজকে কড়ই তলার ঘাটে ট্রলার টা দেখা যাচ্ছে না, তবে কি আজকে রাব্বি আসে নি। না এমন তো হয় নি কখনো, ফোনটা হাতে নিতে নিতেই হটাৎ রাব্বির উদয় , শাহকে জড়িয়ে ধরে বললো, "শাহ্, চারিদিকে ফর্সা হয়ে গেছে তাই আজকে আর ঘাটে ভিড়াই নি, বন্ধু, " চল, একটু এগিয়ে ট্রলারে উঠে পরি। তোকে নামিয়ে আমি আবার ফেরত আসবো।"
শাহ্ নিরব সম্মতিতে রাব্বিকে অনুসরণ করে ট্রলারে গিয়ে উঠলো। হটাৎ কিছুদূর যেতেই রাব্বি বলে উঠলো, "শাহ্, টিভিন ক্যারিয়ার টা দে তো, খেয়ে নেই। আমি আগেই জানতাম, চাচী আম্মা খাবার পাঠাবে, তাই কিছু না খেয়েই চলে আসছি" বলেই হো হো হাসতে লাগলো রাব্বি। "এক শর্তে দিতে পারি, আমাকে খাইয়ে দিতে হবে " বললো শাহ্ । "আরে এমনেও খাইয়েই দিতাম তোরে", এই বলে শাহ্ এর মুখে খাবার তুলে দিলো।
ট্রলারের ইঞ্জিনের শব্দ কেমন পানিতে লেগে কানে এসে লাগছে। এই শব্দের সুরের সাথে সিগারেট খেতে হয়,আর নাহলে জমে না ব্যাপারটা। দুইজনে ট্রলারের মাথায় গিয়ে বসলো, সিগারেট টা অর্ধেক খেয়ে শাহ্ রাব্বির দিকে বাড়িয়ে দিলো। রাব্বি শাহে্র হাতটা ধরে বললো, "বন্ধু,তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি, তুই জেনেও কেন অয়নের দোষ কাধে নিলি আর অয়নও জানে না, কাজটা ও করেছে! এ কেমন খেলা তোর বন্ধু? "
অবাক দৃষ্টিতে শাহ তাকিয়ে রইলো রাব্বির দিকে, বলে উঠলো, "রাব্বি, তোর তো এইটা জানার কথা না, তুই কিভাবে জানলি?" রাব্বি বললো, "শাহ্, আমি শুধু তোর বন্ধু না, আমি তোর ভাই "। শাহ্ অন্য দিকে কথা ঘুড়িয়ে বললো, আরেকটা সিগারেট জ্বালা রাব্বি, মাথা ঝিম ধরে আছে।অইতো প্রায় ঘাটে চলে আসছি আর ১০ মিনিট লাগবে হয়তো,আমি চটপট রেডি হয়ে নেই।
ট্রলার পাড়ে ভিড়লো, ঢোলা সার্ট আর একটা সাদা ছাপার লুঙ্গিতেও শাহ্কে দারুণ লাগছে, কি জানি ও এই চেহারা নিয়ে এই বেশভূষায় কিভাবে ছদ্মবেশে আছে । শাহ্ লাফ দিয়ে হনহন করে হেটে চলে গেলো,একবারো পিছনে তাকালো না।
শাহ্ কখনো পিছনে তাকায় না!!!!!!
চলবে..... দ্বিতীয় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন...