সম্মোহিত দেওয়ান - প্রথম পর্ব (আগে গেলে বাঘে খায়)

প্রথম পর্ব 

সম্মোহনী তুমি, সম্মোহিত দেওয়ান

রাত ১২:৩০! 

ঢাকাতে রাত নামে ভোর রাতে ,যহন কাকেরা জেগে উঠে ময়লার ঘ্রাণে। 

খুব ভোরের যাত্রী রিক্সায় উঠতে দামাদামি বেশি করে 

আর অন্যদিকে রাতের যাত্রী ভাড়া নিয়ে ঝামেলা করে কম। এই কয়দিন অন্তত এতটুকু বুঝে গেছে  "দেওয়ান চাঁদ "। এর রহস্য একটু আলাদা। 

বাবা-মা ছোটবেলায় শখ করে নাম রেখেছে "দেওয়ান চাঁদ"। 

নামের সাথে স্বার্থক যেনো তার উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের গঠন। 

মাঝে মাঝে লোকে এই বলে  টিটকারী দেয়," নাম রাখছে "দেওয়ান চাঁদ"  আর চালায়  রিক্সা"। 

ওর রিক্সার লোকে একটা নামও দিছে, "দেওয়ান চাদের ঘোড়া"। 

দেওয়ান চাঁদ অবশ্য এতে মন খারাপ করে না বরং ভাবে, যাক আমি অন্তত লোকের  একটু হাসির কারণ হইতে পারলাম। এইটাও বা কম কিসের! 

অসুস্থ বাবার ঔষধের টাকাটা আজকে তার যেইভাবেই হোক কামাতে হবে! গত দুইদিন ধরে ওনার ঔষধ বন্ধ। আজকে যেইভাবেই হোক বাবার জন্য ঔষধ নিয়ে যাবে সে। এই জন্য সকাল পর্যন্ত রিক্সা চালালেও চালাবে। 

মাসের প্রথমে একটু চাপ হয়ে যায়।  বাসা ভাড়া, বাজার খরচ, ছোট সব মিলিয়ে  এমনিতেই টাকা থাকে না৷  চাকুরীজীবির মাসের বেতন, ওনাদের ১-৩ তারিখের হিসাব হয় আর রিক্সাওয়ালার প্রতিদিন কামাতে হয়। লোকেরা বেতন পেলে সে খুশি, ১-১০ তারিখে ভাড়াও বেশি হয়। লোকজন রিক্সায় উঠে বেশি।  বাঙালী চলে আবেগে,পকেটে টাকা থাকলে হাটার রাস্তাও রিক্সায় যাবে আর না থাকলে হেটে চলে যাবে। 

সবচেয়ে কমের মধ্যে এই দেশের লোক বিলাসিতা করে!

আজকে সোনারগাও সিগন্যালে অনেকক্ষন ধরে রিক্সা নিয়ে বসে "দেওয়ান চাঁদ"। 

পাশ থেকে ওর গ্যারেজের ই আরেক রিক্সার ডাইভার আকবর আলী বললো," কি, দেওয়ান চাঁদ,আজকে দেহি পকেটে চাঁদ উঠে না, ঘোর অমাবশ্যা লাগছে নাকি? " বলেই হতাশায় ভরা চোখটা চারিদিক  ঘুরিয়ে নিলো।

দেওয়ান চাঁদ চুপ থাকে আর হাতে থাকা সিগারেটটা হালকা একটা টান মারে। কথা বাড়াতে মন চাচ্ছে না। 

সত্যিই আজকে যাত্রী কম, ঢাকার শহরের লোকজন আজকে রাত জাগা ভুলে গেলো নাকি!  কেমন জানি, সবাই ঘুমিয়ে আছে!  শুধু যেনো জেগে আছে সিগন্যালে অপেক্ষায় থাকা তাদের চোখ। 

দূর থেকে  টিসিবির বিল্ডিং এর সামনের রোড টা দিয়ে একজন লোক হেটে আসতে দেখলো তারা। সাদা শার্ট পড়া মাঝবয়সী এক লোক , মুখে ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি এগিয়ে আসতে দেখেই আকবর আলী  রিক্সার প্যাডেল মেরে এগিয়ে গেলো। 

"আরে মিয়া, লোকটারে আইতে দাও। তারপর নাইলে তুমিই  ভাড়াডা মাইরো।" বয়স্ক এক  রিক্সাচালক বলে উঠলেন।  নেহাৎ অভাবের তাড়না না থাকলে এই বয়সী একজন লোক এত রাতে রিক্সা চালাতে নামে না!

কম বয়সী এক ছেলে, বয়স ১৪ কি ১৫ হবে, এই নিষ্ঠুর দুনিয়া তার হাতেও রিক্সার হ্যান্ডেল ধরিয়ে দিছে। সে হাসতে হাসতে বলে উঠলো, "কাকা,আমাগো গেরামের মাইনষের তে   হুনতাম (শুনতাম) ওরা কইতো, আগে গেলে বাঘে খায় আর পিছে গেলে স্বর্ণ পায়। দেহো আজকে বাঘে খায় নাকি ভাইরে "।

দেওয়ান চাঁদও শুনলো কথাটা। 

আস্তে আস্তে আকবর আলীর রিক্সাটা তাদের  চোখের সোজা রাস্তাটা থেকে ডান দিকে বাক নিয়ে চলে গেলো। এখন আর রিক্সাটা দেখা যাচ্ছে না। 


চলবে....দ্বিতীয় পর্ব পড়তে ক্লিক করুন 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন