শাহ্ - তৃতীয় পর্ব - ( ঐশ্বর্যময় মায়া )

তৃতীয় পর্ব 


 
ঐশ্বর্যময় মায়ার রাজ্যে কি হয়?? 

নিস্তব্দটা কেমন গ্রাস করে রেখেছে আজকের বিকালটা!  

শুধু দূর থেকে নদীর পাড়ে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শব্দ কানে আসছে ঐশ্বর্যর।  

ওর মনে হচ্ছে, এই পৃথিবীতে সে খুব একা। একাকিত্বের মহারানী হয়ে সে তার রাজ্য সামলাচ্ছে!

প্রতিদিন বিকালে ছাদে এসে  পূর্বকোণার ছোট্ট দোলনাটিতে বসে সে তার একাকী রাজ্যের  এই খোলা আকাশ,নদীর ঠান্ডা বাতাস আর শাহ্ যেখানে প্রতিদিন বিকালে ওকে এক নজর দেখার জন্য  দাঁড়িয়ে থাকতো, অই যে বকুল গাছটার সুন্দর মিষ্টি ফুলের ঘ্রাণের হাজিরা নেয় আর সাথে তার একমাত্র সেনাপতি "মায়া"। 

শাহ্ চলে যাওয়ার পর "মায়া" ই ঐশ্বর্যকে দেখে শুনে রাখে, যখন ওর খুব মন খারাপ হয়, মায়া ওর বুকে এসে চুপটি করে শুয়ে থাকে। গায়ের সাথে ঘষাঘষি করে। 

কি জানি, এই ছোট্ট বিড়ালরানী কি বোঝে মনের ভাষা!! 


প্রতিদিনের মতো আজকে বিকালেও সে বলা নেই কওয়া নেই ঐশ্বর্যের কোলে এসে বসে আছে।

আর কিছুক্ষণ বাদে ওর সবুজ চোখ দুইটি যেনো মার্বেলের মতো ঘুরে চারদিক  ঘুরে পর্যবেক্ষণ করে, কোথায় কি হচ্ছে!! 

সাদা তুলতুলে পশমে হাত বুলিয়ে ঐশ্বর্য মায়াকে আদর করে দেয়! 

 "এই মায়া, তোর কি সেইদিনটার কথা মনে আছে? "

মায়া মিউ করে একটা  ডাক দিয়ে  সম্মতি দেয়, হ্যা ওর মনে আছে।  

মায়া যখন একবার মিউ করে  ডাকে তারমানে ও হ্যা বলছে, আর দুইবার ডাকলে "না"।  এইটাও শাহ্ ওকে বলে দিছিলো! 

"সেইদিন আমি একটু অবাক ই হয়েছিলাম, অন্য সবার প্রেমিকেরা ফুল দিয়ে প্রোপজ করে কিন্তু শাহ্ যেইদিন প্রথম আমাকে ওর ভালোবাসার কথা বলে  ছিলো, তখন সে ফুল না, তোকে আমার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলো, 


"ভালোবাসী ঐশ্বর্য , 

 মায়ার গায়ের সাদা শুভ্রের মতোন

 আমি তোমায় ভালোবাসী। 

মায়ার সবুজাভ চোখের মতোন

আমার ভালোবাসা তোমার জন্য চিরন্তন "। 


মায়ার গায়ের হাত বুলাতে বুলাতে একমনে বলে যাচ্ছিলো ঐশ্বর্য। 

কেমন জানি সেইদিন দিনটাতে ফিরে গেলো। 

চোখ বুজে সে শাহ্কে অনুভব করতে চাইলো , এইতো ছেলেটার গায়ের মিষ্টি ঘ্রাণটা ওর নাকে এসে লাগছে।

মায়াকে বলেছিলো, "এই মায়া আমি যখন থাকবো না, তখন তোর মালকিন কে দেখে রাখবি"।

মায়াও অক্ষরে অক্ষরে পালন করে গেছে তার মালিকের কথা। 

এই পৃথিবীতে চোখ খুলে মায়া যে প্রথম শাহ্কেই দেখেছিলো। হয়তো ওর মায়ের অজান্তেই মায়ার চোখ ফোটার আগেই মায়ার মায়ের মালিকের বাড়ির লোক ওকে ফেলে দিয়ে গেছিলো। ভাগ্যিস সেইদিন শাহ্ কুড়িয়ে এনেছিলো!! 


হটাৎ মায়া কেমন অস্থির হয়ে গেলে! ঐশ্বর্যর কোল থেকে মোচড় দিয়ে এক লাফে দূরে চলে গেলে। 

"এই মায়া, দাড়া বলছি। এইবার প্রজাপতি ধরতে গেলে আচ্ছা পিটুনী খাবি" ঐশ্বর্যর ডাক শুনে মিউ করে একবার আদুরে ডাক দিলো মায়া । আবার লাফ দিয়ে দোলনায় উঠে ঐশ্বর্যর পাশে গিয়ে বসলো,ওর চাহনীতে কেমন এক অস্থিরতা,  রোদ্রফাটা মাটির যেমন বৃষ্টির জন্য আকাঙ্ক্ষার অপেক্ষা । 

তবে কি মায়া কারো জন্য অপেক্ষা করছে?

তবে কি শাহ্ আসবে!!  

না,ঐশ্বর্য এইসব কি ভাবছে,  নিজের মাথায় নিজেই হালকা ঝাকুনী দিলো সে । অনেকটা কোনো এক সুন্দর  স্বপ্নের মাঝে ঘুম ভেঙে যাওয়ার মতোন। 

অনেক সময় পরিস্থিতি স্বীকার  করতে অনেক সময় পরিবেশের পরিবর্তন জরুরী! এই ভেবে আর দাড়াতে চাইলো না সে। 

"চল মায়া, রুমে চলে যাই " বলেই ঐশ্বর্য ছাদ থেকে নেমে যাচ্ছিলো। অন্য সময় মায়া ওর পিছু পিছু হাটলেও আজকে  নামলো না, ঠায় দোলনায় বসে রইলো। এ যেনো কারো জন্য  কোনো এক নিরব অপেক্ষা ! 

"খুব পাজি হয়েছিস, তাই না? 

 এই যে আমি রুমে গেলাম, গিয়ে লক করে দিবো দরজা। দেখবো তুই কিভাবে আমার কাছে আসিস "..বলেই 

হন হন করে সিড়ি থেকে নেমে গেলো সে। 


বকুল তলার ছায়ামূর্তিটা হটাৎ নড়ে উঠলে! 

মায়ার সবুজাভ চোখের চাহনীর দ্যুতির কাছে হার মানতে হলো শাহ্কে। মায়ার চোখ ফাকি দিতে পারে নি সে!! 

মায়া দোলনা থেকে নেমে রেলিং এ গিয়ে বসলো। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শাহ্ এর দিকে।  শাহের কথা সে রেখেছে, সে তার মালকিন কে একা রেখে দৌড়ে যায় নি শাহ্ এর কাছে।

শাহ্ আর দাড়ালো না, ঝোপের আড়াল দিয়ে নদীর পাড়ের রাস্তাটায় নেমে গেলো। 

মায়া যেনো ওর সবুজাভ চোখের ক্যানভাসে শাহের চলে যাওয়াটা  আকিয়ে নিলো। 



চলবে.. চতুর্থ পর্ব পড়তে ক্লিক করুন 

  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন