তৃতীয় পর্বঃ
সন্ধ্যায় গালিব আর সাপ রাজপুত্র ভোজ সভায় গেলো। সাপরাজ তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো।
গালিব সাপের ভোজে খাবার নিয়ে যেই চিন্তাটা করেছিলো তা আপাতত আর নেই, তার জন্য মানুষের খাবার প্রস্তুত করা হইছে। এ যেনো এক জাদুর রাজ্য। সাপ রাজত্বে তারা যখন যা চায় সব ই হয়।
খাবার শেষে মহারাজ গালিবকে জিজ্ঞেস করলো, "গালিব তুমি কি সিদ্ধান্ত নিয়েছো যে তুমি কি চাও? "
গালিব বললো,"মহারাজ,আপনি আমার জন্য যা করেছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ,আপনি আমাকে যদি কিছু দিতেই চান তবে আপনার দাতে বাধানো তিনটি রত্নের থেকে আমাকে সাদা রত্নটি দিন।"
সাপরাজ এই ভেবে অবাক হলেন যে,গালিবের তো এই কথা জানার কথা না! যদিও এই রত্ন নিয়ে অনেক রাজ্যের সাথে তাদের সাপরাজ্যের যুদ্ধ হয়েছে কিন্তু তাই বলে তো গালিবের মতো একজন সাধারণের মানুষের পক্ষে এই খবর জানা সম্ভব না। সাপরাজা তার ছেলের দিকে তাকালেন, তিনি বুঝলেন একমাত্র তার ছেলেই তাকে এই কথা বলতে পারে।
মহারাজ আর গালিবকে না বলতে পারলো না, তিনি তার ছেলের জীবন বাচানোর পুরষ্কার হিসেবে তার সাদা রত্নটি দিয়ে দিলেন। তিনি গালিবকে বললেন,"গালিব,এই রত্ন অনেক সর্বনাশা রত্ন, এর জন্য সবাই পাগল তবে তাই তোমার দিকে অনেক বিপদ আসবে তবে যতক্ষন এই রত্ন তোমার কাছে থাকবে ততক্ষন তুমি যা চাইবে তাই ই হবে। তাই কখনো কারো ধোকায় পড়ে এই রত্ন হারিয়ে ফেলো না। শুধুমাত্র ধোকায় ই তোমার থেকে এই রত্নটি নিতে পারবে।"
গালিব বললো,"সাপরাজ,আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ,আমি কখনো এই রত্ন আমার কাছ থেকে দূরে সড়াবো না "
সাপরাজ বললেন,"তুমি এই রত্নটি আংটি বানিয়ে তোমার হাতে পরে রাখবে। কখনো খুলবে না। রত্নকে বলো, এই রত্ন তুই আংটি হয়ে যা। "
গালিব তাই ই বললো,"এই রত্ন তুই আংটি হয়ে যা।"
সাথে সাথে রত্নটি আংটি হয়ে গেলো। গালিব আংটিটি হাতে পরে নিলো।
সাপরাজপুত্র বললো,"গালিব ভাই,এখন থেকে তোমার সব ইচ্ছা পূরণ হবে। আমি কি ভাই হিসেবে যথেষ্ট সাহায্য করতে পেরেছি?"
গালিব বললো,"ভাই, তোমাকে ধন্যবাদ,তুমি আমার অনেক উপকার করলে।"
সাপরাজ বললো,"গালিব, তোমাকে কিন্তু এখনোই যেতে দিচ্ছি না, এই রাজ্যে তোমার ভাইয়ের সাথে ঘুরে বেড়াও, আনন্দ ফূর্তি করো আর এমনিতেও রত্নের পুরোপুরি ব্যবহার তুমি শিখো নি। তুমি এই কয়দিন রাজপুত্রে কাছেই সব শিখে নাও।"
এইভাবে সাপরাজ্যে কেটে গেলো এক মাস। এখন বিদায়ের পালা। গালিব সাপরাজের কাছ থেকে বিদায় নিলেন।
গালিব আর রাজপুত্র সমুদ্রের পাড়ে এলেন। রাজপুত্র বললো,"গালিব ভাই,তুমি আবার এসো। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো আর যদি কোনোদিন বিপদে পড়ো তবে সমুদ্রের পাড় থেকে আমাকে স্বরণ করো। "
গালিব বললো,"ভাই,তুমি আমার সাথে যাবেনা অই পাড়ে ? আমি কিভাবে এই সমুদ্র পাড়ি দিবো?"
সাপ রাজপুত্র হাসলেন, সে বললো,"গালিব,তুমি বড্ড বোকা, তোমার কাছে ইচ্ছে পূরণের রত্ন থাকতে আর কি লাগে! তুমি এখনই আংটিকে বলো সমুদ্রের উপর ব্রীজ করে দিতে। দেখবে হয়ে যাবে "।
গালিব আংটিকে বলো," এই আংটি এই সমুদ্রের উপর একটা সেতু করে দে "
গালিব আংটিকে বলার সাথে সাথে সমুদ্রের পানির থেকে উপর একটি ব্রীজ হয়ে গেলো। গালিব তো অবাক।
সাপ রাজপুত্র বললো,"গালিব, তুমি সাবধানে যেও আর যাওয়ার পরে ব্রীজটা ভেংগে ফেলো আর খুব শীঘ্রই আমি তোমার বিয়ের দাওয়াত পেতে যাচ্ছি তো?"
গালিব হেসে বললেন,"হ্যা, আমার বন্ধু, দোয়া করো আমার জন্য।"
সাপরাজপুত্র গালিবকে বিদায় দিলেন। গালিব ব্রীজের উপর হাটতে হাটতে সমুদ্রের এই পাড়ে চলে আসলো।
🍁🍁🍁🍁
গালিব আজকে বাসায় আসলো প্রায় দুই মাস পর৷ গালিবের মা আজকে খুব খুশি। তার ছেলে বাড়িতে এসেছে এত দিন পর।
গালিবের মা বললো,"গালিব তুই হাত মুখ ধুয়ে বস, আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসি। "
গালিব বললো,"মা, তুমি এত কষ্ট করছো কেন?তুমু বসো, দেখো আমি কি করি।"
গালিব তার আংটিকে বললো,"এখানে রুটি আর মাংস এসে যাক।"
গালিব আংটিকে বলতেই রুটি আর মাংসের প্লেট চলে আসলো। গালিবের মা তো অবাক। সে এমন দৃশ্য কোনোদিন দেখে নি। সে তার ছেলেকে বললো,"বাবা,এ তুই কি করলি? কিভাবে হলো এত কিছু?"
গালিব তার মাকে তার সমস্ত ঘটনা খুলে বললো। গালিবের মা বললো,"আল্লাহকে শুকরিয়া, তিনি আমাদের সকল দূঃখ-কষ্ট দূর করেছেন"।
গালিব বললো,"মা,আমাদের বাড়িটা রাজ্যের শেষ দিকে হওয়াতে ভালোই হইছে। আমরা জংগলের ভিতরে রাজপ্রাসাদ বানাবো। এখানেই হবে আমার রাজ্য। তবে মা, এই কথা যেনো আর কেউ না জানে! "
গালিব আর গালিবের মা তৃপ্তিসহকারে অনেকদিন পর একসাথে খেলেন।
এক রাতের মধ্যেই তারা ঘন বনের মাঝখানে এক বিশাল রাজপ্রাসাদ,লোক-লস্কর,আমির,পেয়াদা, প্রজা, হাতি ঘোড়া সমেত বিশাল এক বাহিনী বানিয়ে ফেললেন।গালিব সেখানে থেকেই তার রাজত্ব শুরু করলেন। এখন থেকে সে বন রাজ্যের রাজা। এখন সে রাজার কাছে যাবে তার মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব নিয়ে।
এর পরদিন গালিবের মা ও গালিব তাদের লোকজন নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন বিজয়নগর রাজ্যের উদ্দেশ্যে। রাজার জন্য উপহার হিসেবে সাথে নিয়ে গেলেন রাশি রাশি সোনা,মুক্তা,জহরত, হীরার রত্নভান্ডার।
গালিব ও গাকিবের মা এসে রাজদরবারে ঢুকলেন আর তাদের দাস-দাসীরা সব উপহার নিয়ে রাজার কাছে রাখলো । রাজা,রানী, মন্ত্রীরা সহ সবাই অবাক, তারা জীবনে এত সুন্দর সুন্দর রত্ন দেখেন নি। গালিবের মাকে দেখে রাজা চিনে ফেললেন, তার স্বামী তো এই রাজ্যের এক বড় ব্যবসায়ী ছিলেন যিনি মারা যাওয়ার পর তার সমস্ত সম্পত্তি ঋনের দায়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিলো।
গালিবের মা বললো,"মহারাজ, আমাদের পক্ষ থেকে এইসব উপহার আপনার জন্য, যদি অনুমতি দেন তবে আমি রাজকন্যার সাথে আমার ছেলের বিয়ের প্রস্তাব রাখছি। "
রাজা গালিবের বাবার ব্যাপারটা জানতেন। তিনি এও জানতেন যে, তার বাবা নির্দোষ কিন্তু সমস্ত প্রমান গালিবের বাবার বিরুদ্ধে যাওয়ায় সে তাকে শাস্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। গালিবকে দেখে তার মনে মনে পছন্দ হয়ে গেলো আর কিছুটা অনুশোচনাও কাজ করলো তার মনে।
রাজা বললেন,"আমি তোমাদের পরিবারকে অনেকদিন ধরেই জানি,তোমার বাবা আমার পারিবারিক বন্ধু ছিলেন।আমি যদিও তোমাদের অনেক খুজেছি কিন্তু কোথাও তোমাদের পাই নি।সর্বপ্রথম আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা চাই, আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি গালিবের সাথে আমার একমাত্র মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব কবুল করলাম। "
ঠিক সেই মূহুর্তে বাধ সাধলেন মন্ত্রী।
চতুর্থ পর্ব পড়তে ক্লিক করুন...