ব্লাক ফাঙ্গাস কী ঃ
ছত্রাক জনিত একটি রোগের নাম ব্লাক ফাঙ্গাস । বৈজ্ঞানিক নাম "মিউকোরমাইকোসিস"। অনেকে এটিকে কালো ছত্রাক নামেই ডাকে। এটি সাধারনত নাক, মুকজ,চোখে আক্রমণ করে । " মিউকোরমাইকোসিস" আসলে ব্লাক ফাঙ্গাস নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্লাক ফাঙ্গাস রোগের নাম উল্লেখ নেই তবে আমজনতার কাছে ঘটনাচক্রে এই রোগের নাম হয়ে যায় ব্লাক ফাঙ্গাস। Justamomentplz.blogspot.com এই নামটি শুধু লোকপরিচিতির জন্য ব্যবহার করেছে, অজ্ঞানতাবশত নয়।
ব্লাক ফাঙ্গাস কোথায় থাকেঃ
মিউকোরমাইকোসিস আমাদের পরিবেশের সর্বত্র বিদ্যমান।আমাদের সাথেই এই ছত্রাকটি আমাদের চারিদিকেই আছে।অনেকদিন রেখে দেওয়া আপনার ব্যবহৃত জুতার মধ্যেও এই ফাঙ্গাস থাকতে পারে অথবা অনেক দিন রেখে দেওয়া রুটির মধ্যেও।মাটি, ফল,শাক-সবজি,সার,গাছপালার মধ্যেও এই ফাঙ্গাসটি থাকতে পারে।এটি বিরল কিছু নয়। এই ছত্রাক যেহেতু আমাদের চারপাশেই বিদ্যমান সেহেতু এই ছত্রাক আমাদের নাক,মুখ ও শরীরে থাকাও অস্বাভাবিক না। অর্থাৎ এই ছত্রাক একজন সুস্থ মানুষের শরীরেও থাকতে পারে কিন্তু তাই বলে যে এইটা তার জন্য ঝুকির এমন কিছু না। সাধারণত কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যাক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় অথবা যেইসব ব্যাক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তাদের ক্ষেত্রে ব্লাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ব্লাক ফাঙ্গাস শরীরে কিভাবে প্রবেশ করে ঃ
মিউকোরমাইকোসিস নামক এই ছত্রাকের আক্রমনে রোগীরা শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন। নাক,কান,চোখ,চোয়ালের সমস্যা দেখা দেয়। শরীরের বিভিন্ন ক্ষত, পোড়া জায়গা, কাটা স্থান দিয়ে ব্লাক ফাঙ্গাস শরীরে ঢোকে।এছাড়াও শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফাঙ্গাসের স্পোরগুলো সাইনাস ও ফুসফুসে ঢোকে।পরবর্তীতে এই ছত্রাক সাইনাস,মস্তিষ্ক, ফুসফুস, খাদ্যনালী সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এর প্রভাব বিস্তার করে।
ব্লাক ফাঙ্গাস রোগের লক্ষন ঃ
লক্ষনগুলোর মধ্যে জ্বর,মাথাব্যাথা,কাশি,রক্তাক্ত বমি, চোখ ও নাকের চারপাশে লালচে ভাব যেটি পরবর্তীতে কালো আকার ধারণ করে। নাকের ভিতরে অনেক সময় কালচে দাগ দেখা যায়। এছাড়াও গালে ও চোয়ালে ব্যাথার অনুভূতির হয়। প্রথমে নাক বন্ধ হয়ে যায় এবং নাক থেকে রক্ত ঝড়া,চোখের পাতা ফুলে যাওয়া,চোখে ঝাপসা দেখা এবং পরবর্তীতে অন্ধত্ব বরণ। সংক্রমণ বেশি ছড়ালে বুকে ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে এবং পরিশেষে মৃত্যু।
সংক্রমণের কারণ ঃ
চিকিৎসকগণ ব্লাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের কয়েকটি কারণ বর্ণনা করেছেন,
এই ছত্রাক আক্রমণের প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া। এই ছত্রাক আমাদের চারিপাশেই বিদ্যমান, এখনো আছে এবং আগেও ছিলো।যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তাদের এই ছত্রাক আক্রান্ত করতে পারে না কিন্তু যাদের সাধারণত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ক্ষেত্রে এই ছত্রাক সংক্রমণের ঝুকি বেশি।
গুরুতর কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির চিকিৎসার জন্য স্টোরয়েড ব্যবহার করা হয়।স্টোরয়েড ব্যবহারের ফলে ডায়াবেটিকস আক্রান্ত ও নন-ডায়াবেটিকস উভয় রোগীর ই রক্তে শর্করার পরিমান বেড়ে যায় যার ফলে এই ছত্রাকটি বেড়ে উঠার জন্য একটি উর্বর পরিবেশ পায় এবং বেড়ে উঠে। কভিডে আক্রান্ত ব্যাক্তি ও ডায়াবেটিকস রোগে আক্রান্ত উভয় ব্যাক্তির ই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় এই ছত্রাক খুব দ্রুত তাদের শরীরে সংক্রমিত হয়।
অনেকেই ছত্রাক আক্রমণের আগে জানতোই না যে তার ডায়াবেটিকস আছে, যার ফলে অসচেতনতার অভাবে এই সংক্রমণ অনেকের ই হচ্ছে।
যারা দীর্ঘদিন করোনা আক্রান্ত হয়ে আই,সি,উ তে ছিলেন তাদের চিকিৎসার জন্য তাদের নলের মাধ্যমে অক্সিজেন দেওয়া হয়েছিল তাদের ক্ষেত্রে এই ছত্রাক আক্রান্ত হওয়ার বেশি কেস দেখা গেছে কারণ অনেক ক্ষেত্রেই এই রোগ ছড়িয়ে পরছে অক্সিজেনের হিউমিডিফায়ার থেকেই।
আমাদের দেশের অথবা ভারতের গ্রীষ্মকালীন জলবায়ুতে এই ছত্রাক খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় যার ফলে আক্রান্ত বেশি হয়।
পরিবেশের কারণেও এই রোগটি রোগীর শরীরে দ্রুত সংক্রমিত হয় কারণ আগের থেকেই এই ছত্রাকটি আমাদের চারপাশেই ছিল তাই পরিবেশ খুব ই গুরুত্বপূর্ণ।
ব্লাক ফাঙ্গাস থেকে সুরক্ষার উপায় ঃ
এই ভাইরাস যেহেতু আমাদের চারপাশেই থাকে সেহেতু সেই সব জায়গায় আমাদের যাওয়া বন্ধ করা সম্ভব না।এক্ষেত্রে আমাদের এই রোগ প্রতিরোধের জন্য কিছু করনীয় আছে।
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের এক্ষেত্রে বেশি সাবধান হতে হবে।কিছু পদক্ষেপ নিলে এই সংক্রমণ রুখে দেওয়া যায়, যেমনঃ
১.এই ছত্রাকের আক্রমণ রুখে দিতে সর্বপ্রথম জরুরী রক্তে শর্করার পরিমান নিয়মিত মেপে দেখা।
২.যেসব জায়গায় ধুলাবালি রয়েছে সেইসব জায়গা এড়িয়ে চলা। যদি সম্ভব না হয় তবে মাস্ক পরে বাইরে বের হওয়া।
৩.চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে রাখা।
৪.রোগীকে অক্সিজেন ব্যবহারের আগে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা।
৫.স্টোরয়েড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানী হওয়া কারণ স্টোরয়েড জাতীয় মেডিসিন রক্তে শর্করার পরিমান বাড়িয়ে দেয় যার ফলে ব্লাক ফাঙ্গাসে আক্রান্তের ঝুকি বেড়ে যায়।
৬.কোথাও কেটে গেলে, পুড়ে গেলে অথবা ক্ষত থাকলে নিয়মিত পরিষ্কার করা এবং ধুলাবালির সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখা।
৭.প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে যেসব জায়গা পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেইসব জায়গা এড়িয়ে চলা কারণ এতে ছত্রাক আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
৮.জুতার সাথে মোজা ব্যবহার করা,খালি পায়ে না হাটা।
৯.ভেজা দেয়াল অথবা কোনো স্থাপনার সংস্পর্শে না যাওয়া।
১০.মাটি খনন, বাড়ি পরিষ্কারের ক্ষেত্রে জুতা, মাস্ক,লম্বা হাতার সার্ট, লম্বা প্যান্ট পরিধান করা।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এর ভাষ্য মতে শুধু এইসব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলেই যে ছত্রাকের সংক্রমণ এড়ানো যাবে এটি এখনো প্রমানিত নয়।
👍
উত্তরমুছুনজরুরী তথ্য, সবার মনোযোগ দিয়ে পড়া উচিত
উত্তরমুছুন