শ্বাসকষ্ট কীঃ
বর্তমানে বাংলাদেশে শ্বাসকষ্টের রোগীর পরিমান বেড়ে গেছে।
যদি কোনো ব্যাক্তি মনে করে যে, সে ভালোভাবে শ্বাস নিতে পারছে না অথবা শ্বাস নিতে গিয়ে তার কষ্ট হয় তাকে শ্বাসকষ্ট বলে। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ডিসপ্নিয়া(Dyspnoea) বলে।
অনেক সময় আমরা পরিশ্রমের পর হাপাতে থাকি যেমনঃঃখেলাধুলা,সিড়ি বেয়ে উপরে উঠা অথবা যেকোনো কাজ। এইটা সবার ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক,কাজ করলে শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুততর হয় কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ মনে করে এইটা শ্বাসকষ্ট। এইটা আসলে ভুল ধারণা।যদি শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে নিশ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট হয় তবে ধরে নিতে হবে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।আসলে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে অন্য যেকোনো রোগের লক্ষন। ভালোভাবে চিকিৎসা, কিছু ব্যায়াম ও কিছু বাজে অভ্যাস বাদ দেওয়ার মাধ্যমে শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
শ্বাসকষ্ট কেনো হয়ঃ
বিভিন্ন শারীরিক জটিলতার জন্য শ্বাসকষ্ট হতে পারে।যেমনঃ
১. অনেকে শ্বাসকষ্টের সাথে হাপানি রোগকে গুলিয়ে ফেলে। সব শ্বাসকষ্টের রোগ ই হাপানি নয়। তবে বাংলাদেশে বেশিরভাগ শ্বাসকষ্টের রোগীর কারণ হয় হাপানি। হাপানি হলে হটাৎ করে শুরু হয়,বাশির মতো শব্দ হয়, বুকে টান ধরে এবং প্রচুর শ্বাসকষ্ট হয়।
২ হৃদরোগের সমস্যার জন্যও শ্বাসকষ্ট হয়।হৃদপিন্ডের বাম পাশের অংশ অকেজো (লেফট হার্ট ফেইলিইওর) হয়ে পরলে ফুসফুসের নিচে পানি জমে যার ফলে শ্বাসকষ্ট হয়
৩.আমরা যেহেতু ফুসফুস দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেই তাই ফুসফুসের যেকোনো সমস্যাই শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।বিশেষ করে নিউমোনিয়া শুরু হলে শ্বাসকষ্ট হয়। হৃদপিণ্ড যখন প্রয়োজনীয় পাম্প করতে পারে না তখন ফুসফুসের নিচে রক্ত জমাট বাধে এবং যার ফলে ফুসফুসের শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটেফলে শ্বাসকষ্ট হয়।
৪.শ্বাসকষ্টের অন্যতম কারণ হচ্ছে মানসিক। দুশ্চিন্তার কারণে অনেকে চুপচাপ হয়ে থাকলে শ্বাস কম নেওয়া হয় এবং এই জন্যে রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমান বেড়ে যায় আর তখন শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
৫.শ্বাসকষ্টের একটি বড় কারণ সিওপিডি।এই রোগে শ্বাসনালীর দেয়াল পুরু হয়ে যায় এবং তাতে প্রচুর শ্লেষ্মা জমে। যার ফলে সরু শ্বাসনালী দিয়ে বাতাস প্রবেশ করতে পারে না, বায়ুথলীতে বাতাস আটকে থাকে। বাতাস আটকে থাকার কারণে রক্তে অক্সিজেন কমে যায় যার ফলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
৬. কিডনী ড্যামেজের কারণেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
৭.শ্বাসনালীতে কোনো কিছু ঢুকে গেলে। কলকারখানায় কাজ করা অনেক শ্রমিকের শ্বাসকষ্টের কারণ কোনো রাসায়নিক দ্রব্য শ্বাসনালীতে ঢুকে যাওয়া। শিল্প কারখানায় কাজ করার ফলে শ্রমিকগণ যে ধরনের রোগের সম্মুখীন হোন তাতে প্রতিটা রোগের ই প্রাথমিক লক্ষন হচ্ছে শ্বাসকষ্ট।
৮.অতিরিক্ত ধূমপান শ্বাসকষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়াও গাড়ির কালো ধোয়া এবং ধুলাবালিময় স্থানে, পরিবেশ দূষণ শ্বাসকষ্টের অন্যতম কারণ। যেমনঃ দিল্লিতে অনেক রোগী পাওয়া গেছে যারা জীবনেও সিগারেট খান নি কিন্তু তাদের ক্যান্সার ধরা পরেছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ইত্যাদির অন্যতম কারণ দিল্লীর ধূলা। যারা কারণে অনেকে দিল্লীকে "ধূলার শহর" বলে থাকেন।
৯.যক্ষ্মা রোগে নিয়মিত চিকিৎসা না করার ফলে যক্ষ্মা থেকে ফুসফুসের অনেক অংশ নষ্ট হয়ে যায় যার ফলে শ্বাসকষ্ট হয়।
শ্বাসকষ্ট অনেক রোগের লক্ষন হতে পারে। মাঝে মাঝে এমন অনেক রোগী দেখা যায় তাদের কোনো সমস্যাই নেই কিন্তু শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, এর অন্যতম প্রধান কারণ মানসিক।
শ্বাসকষ্ট বাচতে করনীয় ঃ
১.অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এই মতামত দিয়েছেন, শ্বাসকষ্ট সহ ক্যান্সার, হার্ট এটাক, কিডনী ড্যামেজ ইত্যাদি বেশিরভাগ রোগে ধূমপান সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই সর্বপ্রথম কাজ ধূমপান ত্যাগ করা
২.সবুজ শাকসবজি ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। তবে কিছু কিছু খাবারে অনেকের এলার্জিগত সমস্যার কারণে শ্বাসকষ্ট হয় যেমনঃচিংড়ি মাছ,মাংস,ঢেরশ,হাসের ডিম,বেগুন ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় শুধুমাত্র যাদের এইসব খাবারে এলার্জি আছে।
৩.নিয়মিত শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করা তবে সকল রোগীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
৪.নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ মতো জীবনযাপন করা ও ঔষধ খাওয়া।
শ্বাস-প্রশ্বাসের কিছু ব্যায়ামঃ
১.প্রথমে পিঠ সোজা করে বসে স্বাভাবিক কয়েকবার শ্বাস নিতে হবে।এরপর ১ থেকে ২ গুনতে গুনতে শ্বাস নিন এবং ১ থেকে ৪ গুনতে গুনতে ঠোক গোল করে শ্বাস ছাড়ুন।এইভাবে প্রতিদিন নিজের শরীরের কন্ডিশন বুঝে মাঝে মাঝে করতে পারেন
২. বাজারে ফুসফুসের ব্যায়াম করার জন্য বিভিন্ন কোম্পানির রেসপিরোটিমিটার পাওয়া যায় যা দিয়ে খুব সহজেই ব্যায়াম করা যায়। ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খুব কার্যকরী। দাম পড়তে পারে ৩০০-১৫০০ এর মধ্যে।
ব্লাক ফাঙ্গাস সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্লিক করতে পারেন...
valo
উত্তরমুছুন