কয়েক টুকরো জীবন -একটি ছেলের আত্নকাহিনী

কয়েক টুকরো জীবন



মানুষ বদলায়,কারণে অকারণে বদলায় শুধু বেচে থাকে তার মনের মধ্যে এক রাশ চাপা কান্না আর নিজের প্রতি নিজের শত অভিযোগ। 




ছেলেটা একসময় পাহাড়ে যেতে চাইতো, মাটিতে দাঁড়িয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে বলা তার অভিযোগগুলো হয়তো তার দপ্তরে পৌছতো না। সে ভাবতো, পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠে গলার সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করে সৃষ্টিকর্তার কাছে তার অভিযোগগুলো তুলে ধরবে হয়তো তিনি শুনতেন  তার এই আকুল আকুতি।


ছেলেটা একসময় সমুদ্রে যেতে চাইতো, সমুদ্র কত মহান। সমুদ্র হয়তো তার নোনা পানির বুকে মিলিয়ে নিয়ে যেতো তার নোনা চোখের জল। কেউ জানতো না, কোনটা তার চোখের জল আর কোনটা নোনা পানি! 


কিভাবে যেনো কেটে গেলো ছেলেটার জীবনের ২৫ টা বছর।একটা মানুষের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ে আজ সে । শত দায়িত্ব আর ত্যাগের মহিমা যেনো তাকে  আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে । তার যদি শক্তি থাকতো তবে পালিয়ে যেতো এই গ্যালাক্সির বাইরের কোনো গ্রহে। একা থাকাকে ছেলেটি এখন আর ভয় পায় না,সবার কাছে থেকেও তো সে  একা ই। কেউ বোঝে না তাকে 🤨 


সে কি এতটাই দুর্বোধ্য? 


মানুষ দুইভাবে মারা যায়, একটা রক্ত মাংসে গড়া শরীরের মৃত্যু আর একটা মনের মৃত্যু। নিথর পরে থাকা শরীরের ভাগ্যটা খুব ভালো, তার জানাজা হয়, কবর হয় কিন্তু মনের মৃত্যুর কোনো জানাজা হয় না, কবর তো দূরের কথা। সে নিথর হয়ে পড়ে থাকে না, এই পৃথিবী তাকে নিথর শূণ্য হতে দেয় না। শুধু তার আকুতি গুলো চারিপাশ ভারি করে ঘুরে বেড়ায়।


কেউ বোঝে না তারও তো একটা শান্তির মৃত্যুর অধিকার আছে! 


ছেলেটির মনে একটা গোপন কক্ষ।  যার বাইরে বড় করে একটা সাইনবোর্ড আর তাতে লিখা ছিলো, "প্রবেশ সংরক্ষিত"। সে চাইতো সেখানে তার স্পেশাল মানুষটিকে নিয়ে একটা ঘর বাধবে। স্বপ্নও দেখেছিলো খুব কিন্তু জীবনের ২৫টা বছর তাকে পথচলতে দেয় নি। তারও আর ঘর বাধা হলো না। প্রিয়ার দেওয়া গোলাপটা শুকিয়ে গেছে তাতে আর তাজা মিষ্টি ঘ্রাণটা আসে না। গোলাপের প্রতিটা পাপড়িতে লিখা ছিলো তাদের প্রেমের কাহিনী। একদিন এক ঘূর্ণিঝড়ে সব উলট পালট হয়ে গেলো। ঘরটাও ফাকাই পরে থাকে।


জানেন কি, এখন সেই ঘরের বাইরে সাইনবোর্ডে কি লিখা?


ছেলেটা আজ চুপচাপ হয়ে গেছে। বন্ধুদের আড্ডায় এখন আর তার আগের সেই উচ্ছাস পাওয়া যায় না। সে অনেক কিছু বলতে চায় কিন্তু বলতে পারে না, পাছে তাকে নিয়ে তারা যদি হাসাহাসি করে! 


বন্ধুদের আড্ডায় সে আজ যেতে ভয় পায়। তার পকেট তাকে সেই অনুমতি দেয় না, তার পকেটে যেনো ব্লাক হোলের জমানো এক গুচ্ছ অন্ধকার, সেই অন্ধকারে পথ হারিয়ে সে আজ টালমাটাল। তাই আজকাল সে বন্ধুদেরও এড়িয়ে চলে। 

মনে পড়ে তার হাইস্কুলের ইংরেজী শিক্ষকের কথা। স্যার ক্লাসে বলেছিলো,"তোরা সবাই কত ভালো বন্ধু, সবার সাথে সবার কত মিল কিন্তু এমন একটা দিন আসবে যে দিন তোরা নিজেরাই তোদের বন্ধুদের কাছে যেতে লজ্জা পাবি"। সবাই জিজ্ঞেস করে, " স্যার, আমরা আমাদের বন্ধুদের সামনে যেতে লজ্জা পাবো কেন? ওরা যত বড় যা ই হোক না কেন , আমাদের তাতে কিচ্ছু আসে যায় না"।

স্যার সেইদিন চুপ করে ছিলেন। হয়তো তিনি চেয়েছিলেন যে, তার ছাত্ররা যেনো তাদের নিজেদের জীবনেই বাদ বাকি শিক্ষাটা নিয়ে নিক।


ছেলেটা একটা গোডাউনের মালিক, যেখানে হাজার হাজার স্বপ্ন জমে আছে। কেউ কিনতে আসে না তাই তাতে ধুলোও জমেছে। ধূলার উড়ে যাওয়া কণা তাকে আঘাত করে কিন্তু সে কি তা বুঝতে পারে!  

সে বড্ড করে চায়, একটা বৃষ্টি আসুক, তার স্বপ্নগুলো ধুয়ে যাক। গোডাউনটা খালি হোক।


#একটি_ছেলের_আত্নকাহিনী


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন