চতুর্থ পর্বঃ
আজ রাজার মুখের উপর মন্ত্রী এই প্রথম কথা বললো। সে বললো,"মহারাজ,আপনি কি শর্ত ভুলে গেছেন?আমরা সারা রাজ্য ও আশেপাশের সব রাজ্যে ঢেরা পিটিয়ে বলেছিলাম যে, যেই ব্যাক্তি মহারাজের প্রাসাদের সামনে নদীর উপর একটা স্বর্ণের সেতু করে দিতে পারবে তার সাথেই মহারাজ তার মেয়ের বিয়ে দিবেন।"
রাজা বললেন,"আমার মেয়েকে যাতে দূরে বিয়ে দিতে না হয় তাই তো বলেছিলাম, তুমি তো সব ই জানো মন্ত্রী। "
মন্ত্রী বললেন,"কিন্তু মহারাজ যেইসব রাজ্যের শাহজাদারা রাজকন্যাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো তারা কি এইটা মেনে নিবে! তারা কিন্তু আপনার শর্তের জন্যই রাজকন্যাকে বিয়ে করতে পারেন নি। এখন যদি তারা দেখে আপনি শর্ত নিজেই ভেঙে ফেলছেন তবে আমার মনে হয় না তারা বসে থাকবে। তারা নিশ্চয়ই আপনার অপমানের প্রতিশোধ নিবে।"
গালিবের মা বললো,"মহারাজ, মন্ত্রীসাহেব ঠিক বলছেন, আমাদের শর্ত পূরণ করা উচিত। এই বিয়ের সব শর্ত মেনেই রাজকন্যার সাথে গালিবের বিয়ে হবে।"
মহারাজ বললেন,"কিন্তু স্বর্ণের ব্রীজ হওয়াও কি সম্ভব?
গালিব বললো,"মহারাজ আপনি চিন্তা করবেন না।যদি আল্লাহ চায় তবে নদীর উপর স্বর্ণের ব্রীজ আমি বানিয়ে দেবো।আমাকে শুধু এক রাত্রী সময় দিন। পরদিন সকালে আপনারা ব্রীজ দেখতে পারবেন আর আগামীকালই রাজকন্যার সাথে আমার বিয়ে হবে। "
এই বলে গালিব ও গালিবের মা চলে আসলো। রাতে গালিব নদীর পাড়ে গিয়ে ইচ্ছে-পূরণ আংটিকে বললো, " নদীর উপর একটা স্বর্ণের ব্রীজ হোক"
সাথে সাথে নদীর উপর খুব সুন্দর একটা স্বর্ণের ব্রীজ হয়ে গেলো।
পরদিন সকালে সারা রাজ্যের মানুষ তো অবাক, এ কিভাবে সম্ভব!সবাই গালিবের নামে জয়ধ্বনি দিলো।
মহাধুমধামে রাজকন্যার সাথে গালিবের বিয়ে হয়ে গেলো। মহারাজ বিয়ের দিন ই গালিবকে নতুন রাজা ঘোষণা করলেন।
একদিন কথার ফাকে গালিব রাজকন্যার কাছে আংটির কথা বলে দেয়।ইচ্ছেপূরণ আংটির কথা শুনে রাজকন্যার ইচ্ছে যেনো আর শেষ হয় না কিন্তু আংটি দিয়ে তো একদিনে তিনটির বেশি ইচ্ছে পূরণ করা যেতো না! তাই গালিব এইভাবে প্রতিদিন ই রাজকন্যার তিনটি ইচ্ছা পূরণ করতে লাগলো।রাজকন্যা দিনে দিনে লোভী হতে থাকলো। গালিবের মা গালিবকে ডেকে রাজকন্যার ব্যাপারে সাবধান করে দিলো কিন্তু গালিব তার মায়ের কথায় কান না দিয়ে রাজকন্যার সব ইচ্ছে পূরণ করতে লাগলো।
এইভাবে চলে গেল কিছুদিন। গালিব রাজকন্যার ইচ্ছে পূরণ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেল। এখন যেন রাজকর্ম সামলানোটা গালিবের কাছে অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। প্রজাদের ইচ্ছে,কষ্ট শোনার মত সময়ই যেন নেই গালিবের। ইচ্ছেপূরণ আংটি দিয়ে গালিব প্রজাদের দূঃখ-কষ্ট দূর করবে সেটা করতে পারছে না কারণ রাজকন্যা নিজেই একদিনে তিনটি ইচ্ছা পূরণ করে ফেলত তাই গালিব সিদ্ধান্ত নিল যে সে আর রাজকন্যার কোন ইচ্ছা পূরণ করবে না।
এই কথা শুনে রাজকন্যা গেল রেগে। সে একটা ফন্দি করল। গালিব সব সময় তার হাতে আংটি টা পড়ে থাকতো কখনো খুলতো না। একদিন রাতে গালিব যখন ঘুমিয়ে পড়ল তখন সেই ফাঁকে রাজকন্যা গালিবের হাতে থাকা আংটিটা খুলে নিয়ে গিয়ে পালিয়ে গেল।
পরদিন সকালে গালিব ঘুম থেকে উঠে দেখল যে, সে রাজপ্রাসাদের একটা ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে তার চারপাশে কোন আসবাবপত্র, খাট, আলমারি কিচ্ছু নেই। এমন মনে হচ্ছে যেন চোর বুঝি গতকাল রাতে সব চুরি করে নিয়ে গেছে গালিব হকচকিয়ে উঠে পড়লো ব্যাপারটা কি হয়েছে বোঝার জন্য। সে বাইরব গিয়ে দেখে রাজ প্রাসাদের বাইরে প্রজাদের হট্টগোল।
সে আবার প্রাসাদের ভিতরে ফিরে গেল, সে রাজকন্যা কে ডাকল "রাজকন্যা, রাজকন্যা তুমি কোথায়? কেউ কি বলবে কি হয়েছে? "
অনেক খোঁজাখুঁজির পরও রাজকন্যাকে খুঁজে পাওয়া গেল না।
গালিবের মা এসে বললো,"গালিব,কি হয়েছে বাবা? হটাৎ এমন হলো কেন?"
গালিব বললো,"মা,রাজকন্যাকেও পাওয়া যাচ্ছে না।"
গালিবের মা হটাৎ গালিবের হাতের দিকে খেয়াল করলো, সে বলল" একি গালিব, তোর হাতে ইচ্ছেপূরণ আংটিটা কই?"
গালিব হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে আংটিটি নেই। এখন সে বুঝতে পারল কেন ঘরের সব জিনিসপত্র উধাও হয়ে গেছিল। এইসব জিনিসগুলো এই আংটির মাধ্যমে আনা হয়েছিল।
গালিবের মা বলল, "গালিব, প্রজাদের ঝামেলার ব্যাপার টা বুঝতে পেরেছি তুমি তাদের ইচ্ছে পূরণ আংটির মাধ্যমে যেসব সাহায্য করেছিলে তা সব উধাও হয়ে গেছে তাই তারা এখানে এসেছে "
গালিব বললো,"মা, রাজকন্যাকেও পাওয়া যাচ্ছে না তার মানে কি রাজকন্যাই আংটি চুরি করে পালিয়েছে। আমরা তিনজন ছাড়া তো আর কেউ এই আংটির ব্যাপারে জানতো না। "
গালিবের মা সিপাহীকে বললো,"সিপাহী,এখনই রাজপ্রাসাদের গেটের প্রহরীকে ডাক দাও। "
প্রহরী আসলো, সে নিশ্চিত করলো,গতকাল রাতে রাজকন্যা তার ঘোড়া নিয়ে সমুদ্রের দিকে গেছে।
গালিব বুঝতে পারলো, রাজকন্যার লোভ ই তাকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।
হটাৎ রাজদরবারে দূত এসে বললো,"মহারাজ, রাজকন্যা সমুদ্রের মাঝখানে এক দ্বীপে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে কিন্তু সেই দ্বীপে সে গেলো কিভাবে! ওখানে যাওয়া তো অসম্ভব!"
মহারাজ গালিব বুঝতে পারলো যে রাজকন্যা ইচ্চেপূরণ আংটি দিয়ে ওখানে গেছে।
গালিব তার মাকে বললো,"মা,আমি একাই গিয়ে রাজকন্যাকে নিয়ে আসবো। আমি চাইনা ব্যাপারটা রাজ্যের কেউ এখন জানুক তবে একটা হট্টগোল লেগে যাবে।"
গালিবের মা বললো,"যা বাবা,তোর উপর পুরো রাজ্যের সমৃদ্ধি, সুখ-শান্তি নির্ভর করছে। তুই ভালোভাবে ফিরে আয়। দোয়া রইলো তোর জন্য। "
স্বর্ণের ব্রীজ 🤨
উত্তরমুছুন