পঞ্চম ও শেষ পর্বঃ
গালিব সেইদিন ই ছদ্মবেশে প্রাসাদ থেকে বের হয়ে গেলেন। বন পেড়িয়ে সমুদ্র। গালিব বনের মধ্যে দিয়ে হাটতে থাকলো।
হটাৎ সে একটা গলার শব্দ শুনতে পেলো, কে যেনো সাহায্য চাইছে। গালিব সামনে গিয়ে দেখলো একটা পানকৌড়ি পাখি।পাখিটা একটা ফাদে আটকে আছে। সে গালিবকে বললো,"ভাই,তুমি এই একলা পথে কোথায় যাচ্ছ?আল্লাহ ই হয়তো আমাকে উদ্ধারের জন্য তোমাকে পাঠিয়েছে।"
গালিব সব ঘটনা পাখিকে খুলে বললো।
পানকৌড়ি পাখি বললো,"ভাই,তুমি আমাকে উদ্ধার করো। আমি তোমাকে তোমার আংটি খুজে দিতে সাহায্য করবো "
গালিবের দয়া হলো, সে পাখিটিকে ফাদ থেকে উদ্ধার করলো।পাখিটিও গালিবের সাথে আংটি উদ্ধার করতে রওনা দিলো।
হাটতে হাটতে কিছুক্ষন পর গালিব দেখলো একটা ইদুর কৃষকের দেয়া বিষধান খেয়ে রাস্তায় পরে আছে। সে গালিবকে বললো,"ভাই, আমাকে বাচাও, আমি তোমাকে একদিন সাহায্য করে এই ঋন শোধ করবো। "
গালিব ইদুরটিকে বাচালো। ইদুরটি গালিবের সব কথা শুনলো।
তারা তিনজনে এসে সমুদ্রের পাড়ে থামল গালিবের তার সাপবন্ধুর কথা মনে পড়ে গেল। সে বলেছিল যে গালিব বিপদে পড়লে সে যেনো সমুদ্রের পাড়ে এসে তাকে ডাকে তবেই সে দেখা দিবে। গালিব তাই করল সে তার সাপবন্ধুকে ডাকলো, "বন্ধু, বন্ধু, আমাকে বাঁচাও, আমি খুব বিপদে।"
গালিব ও তার সাথীরা দেখল দূর সমুদ্র থেকে একটা ঢেউ তাদের দিকে ছুটে আসছে আর সেই ঢেউয়ের উপর বসে আছে সাপরাজপুত্র।
গালিব দৌড়ে গেলো।আজ অনেকদিন পর সাপবন্ধুর সাথে দেখা। সাপবন্ধু গালিবের বিয়েতে আসতে পারে নি।তবে সে আসলে হয়তো গালিবকে আর এই দিনটা দেখতে হতো না।
গালিব বললো,"বন্ধু,আমি জানতাম, তুমি আমাকে সাহায্য করতে ঠিক ই আসবে।"
সাপবন্ধু বললো,"ভাই,আমি সবই জানি।এখন কথা বাড়ানোর সময় নয়।তোমরা তিনজনে আমার পিঠে উঠে বসো, আমাদের এখনই সমুদ্র পাড়ি দিতে হবে।বেশি দেরী করা ঠিক হবে না। "
তারা তিনজনে সাপ রাজকুমারের পিঠে চড়ে বসলো।
গালিব বললো,"বন্ধু,আমরা এখন কোথায় যাবো?রাজকন্যা কোথায় আছে? "
সাপবন্ধু বললো,"গালিব ভাই, রাজকন্যা ইচ্ছেপূরণ আংটি দিয়ে সাত সমুদ্রের মাঝখানে এক দ্বীপে পালিয়েছে আর ওইখানে গেলেই রাজকন্যাকে পাওয়া যাবে।"
গালিব বললো,"তবে তাই চলো ভাই"।
সাপবন্ধু একটানা সাতদিন সাতরে চললো।অষ্টম দিনে তারা দ্বীপে গিয়ে পৌছালো। তারা দেখলো, রাজকন্যা দ্বীপের মধ্যে এক পুকুরের মাঝখানে এক আপেল গাছের নিচে বসে আছে।
সাপবন্ধু বললো,"গালিব ভাই, রাজকন্যা আমাদের দেখে ফেললে আর অই আংটি আমরা তার থেকে নিতে পারবো না। অবশ্যই আমাদের লুকিয়ে কাজটি করতে হবে।
ইদুর বললো,"গালিব ভাই, যদি অনুমতি দাও তবে আমি রাজকন্যার থেকে অই আংটি নিয়ে আসতে পারবো। "
গালিব বললো,"ইদুর ভাই, এই কাজটা এত সহজ না।রাজকন্যা যদি তোমাকে দেখে ফেলে তবে সে তোমাকে ইচ্ছেপূরণ আংটির মাধ্যমে হত্যা করে ফেলতে পারে। "
ইদুরটি পানি সাতরে আপেল গাছের নিচে গেলো। সে দেখলো,রাজকন্যা ঘুমিয়ে পরেছে। সে রাজকন্যার হাত থেকে আংটিটি খুলে নেওয়ার চেষ্টা করে পারলো না। এইভাবে আর কতক্ষন!তাই সে রাজকন্যার আংটি সমেত আংগুল তার ধারালো দাত দিয়ে কাটলো ।রাজকন্যা ব্যাথায় হাত ছিটকে দিলো আর আংগুল সমেত আংটি গেলো পানিতে পরে। আংগুল সমেত আংটি পানিতে পড়তেই এক রাক্ষুসে মাছ এসে আংটিটা গিলে নিয়ে চলে গেলো।
ইদুর পড়লো এক মহাফাপরে। এখন সে গালিব কে গিয়ে কি বলবে!
ইদুর পাড়ে এসে গালিবকে সব বললো।
তখন পানকৌড়ি পাখি সব শুনে বললো,"অই রাক্ষুসে মাছটি আমি ধরে নিয়ে আসতে পারবো। "
পানকৌড়ি পাখি পানিতে দিলো এক ডুব। এক ডুবে তিন দিন চলে গেলো কিন্তু পানকৌড়ি উঠলো না। চতুর্থ দিনে পানকৌড়ি পাখিটি একটি মাছ মুখে নিয়ে উঠে আসলো।
সাপবন্ধু বললো,"গালিব ভাই,এই সেই মাছ। তাড়াতাড়ি এর পেট কেটে আংটিটি বের করো।"
গালিব তার ছুড়ি দিয়ে মাছটির পেট কেটে আংটিটি বের করে আনলো।
সে পানকৌড়ি পাখিকে বললো,"পাখি, তুমি কিভাবে জানলে যে এই মাছের পেটে এই আংটিটি? "
পানকৌড়ি পাখি বললো,"ভাই,এই মাছটি এই আংটি গিলে নিজেকে মাছেদের মহারাজ দাবী করেছে এবং আমি গিয়ে দেখলাম, সে অন্য মাছেদের থেকে আলাদা হয়ে এক সিংহাসনে শুয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। "
গালিব বললো,"এতে তুমি কিভাবে বুঝলে?"
সাপবন্ধু বললো,"গালিব ভাই,মাছটি অনেকটা মানূষের মতো। মানুষ যেমন কিছু টাকা পয়সার মালিক হয়ে নিজেকে সবার থেকে শ্রেষ্ঠ ভাবে, তার স্বজাতির থেকে আলাদা থাকে তেমনি এই মাছটির বেলায়ও তাই। "
গালিবও এর থেকে শিক্ষা নিলো। সে রাজকন্যাকে এই দ্বীপেই নির্বাসন দিলেন এবং সাপবন্ধুকে কথা দিলেন যে,সে আর কারো ধোকায় পরবেন না।গালিব পাখি আর ইদুরকে তার রাজ্যে থাকার জন্য অনুরোধ করলো।পাখি আর ইদুর গালিবের অনুরোধ ফেলতে পারলেন না। এইভাবে তাদের সকল দুঃখ-কষ্ট দূর হলো।
গালিব তার রাজ্যে এসে আবার সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।
সমাপ্ত... গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
খুব সুন্দর গল্প
উত্তরমুছুন