গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

 

এখন থেকে আর নয় গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা


"গ্যাস্ট্রিক" নামটার সাথে কে না পরিচিত! আমাদের সবার কাছেই পরিচিত একটি শারিরীক সমস্যার নাম "গ্যাস্ট্রিক"।পরিসংখ্যানে গ্যাস্ট্রিক সম্পর্কিত মেডিসিনগুলোর বিক্রয় সমীক্ষা দেখলে বুঝা যায় যে  আমাদের দেশে গ্যাস্ট্রিক কি পরিমানে একটি নিরব মহামারী রূপে ছড়িয়ে পরেছে।


ঠিক কি কি কারণে হয় গ্যাস্ট্রিক:

🔷গ্যাস্ট্রিকের প্রধান কারণ হলো খাবারের অনিয়ম, এক বেলার খাবার অন্য বেলায় খাওয়া।প্রকৃতি নিয়মের মধ্য দিয়েই চলে। আমি যদি প্রতিদিন দুপুরের খাবার ১ টা বাজে খাই তবে আমার শরীর কিন্তু সেই জিনিসটার সাথে অভ্যস্ত।হজম করতে পাকস্থলীতে যেই এসিড প্রয়োজন সে ঠিক তার টাইমে এসে পাকস্থলীতে এসে জমা হবে কিন্তু এসে দেখবে সেখানে খাবার নাই কারণ আমি সেইদিন দুপুরের খাবার ১ টা বাজে না খেয়ে ৪ টায় খেয়েছি। এসিড খাবার না পেয়ে তখন পাকস্থলীকেই হজম করতে চেষ্টা করে যার ফলে পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ স্তর আস্তে আস্তে ক্ষয়ে যেতে থাকে এবং এর থেকে পরবর্তীতে  গ্যাস্ট্রিক আলসারেরও সৃষ্টি হতে পারে।


🔷তেল,মশলা যুক্ত মুখরোচক খাবারের গন্ধের লোভ সামলাতে পারলেন না! বিয়ের বাড়ির দাওয়াতে গিয়ে পেট পুরে খেয়ে নিলেন আর খাওয়ার শেষে সাথে সাথে এক গ্লাস পানি। ব্যস হয়ে গেলো কাজ। শুরু হয়ে গেলো পেট ফাপা, গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রণা। তাই সেই সমস্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত যাতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়।



🔷এছাড়াও খাওয়ার সময়, পান করার সময় আমাদের শরীরে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন প্রবেশ করে আবার খাদ্য হজম করার সময়ও আমাদের পাকস্থলীতে গ্যাসের সৃষ্টি হয়ে পেটে জমা হয়। এর থেকেও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়।




🔷কিছু কিছু মেডিসিন খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয় যেমন :এস্পিরিন, আইপ্রুফেন জাতীয় মেডিসিন।তাই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যাতিত এই জাতীয় মেডিসিন গ্রহন করা যাবে না।


গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা থেকে হতে পারে আরো বড় সমস্যা





 




গ্যাস্ট্রিক সমস্যার  ঘরোয়া প্রাকৃতিক সমাধান : 


১.নিয়ম মতো খাবার গ্রহন

গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধানে প্রধান ও কার্যকরী সমাধান একটি নির্দিষ্ট টাইমে নির্দিষ্ট নিয়ম মেইনটেইন করে খাবার গ্রহন করা। প্রতিদিন এক ই টাইমে খাবার গ্রহন করতে হবে এবং খুব ভর পেট খাওয়া যাবে না।খাবার আগে একটু পানি খেলে এবং খাবারের পর ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে পানি খেলে অনেকাংশেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান হয়।

খাওয়া এবং ঘুমানোর মধ্যে মিনিমাম ৩ ঘন্টা গ্যাপ রাখা জরুরী।আপনি খেয়ে সাথে সাথে ঘুমিয়ে পরলে পাকস্থলীতে চাপ পরে।ফলে হতে পারে বদহজম, গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা গুলো।যদি আপনি ১২ টায় ঘুমান তবে ৯ টার মধ্যে খেয়ে ফেলুন।খেয়েই একদম ঘুমাতে যাবেন না। 


২. ব্যায়াম করা

আমরা জানতাম নিয়মিত একজন মানুষের ব্যায়াম করা উচিত। এটি শরীরের জন্য উপকারী। কিন্তু আপনি কি জানেন ব্যায়াম গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা কমাতেও সাহায্য করে! খাওয়ার পর সাথে সাথে না শুয়ে পরে একটু হাটাহাটি করলে গ্যাসের সমস্যার সমাধান হয়।


৩. পানি পান করা

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধানে সেই প্রাচীন যুগ থেকেই পরিচিত একটি সমাধান পরিমিত পানি পান করা।এছাড়াও পানি পান গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ছাড়াও অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও উপকার করে।সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে আধা লিটার পানি পান করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান মিলবে। খাবাআগে একটু পানি খেলে এবং খাবারের পর ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে পানি খেলে অনেকাংশেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান হয়।


৪.বিছানার শোয়ার ভঙ্গি 

ঘুমানোর সময় মাথার দিক একটু উচু করে ঘুমালে গ্যাসের সমস্যার সমাধান হয় তবে খেয়াল রাখতে হবে খুব বেশি উচু যেনো না হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় মাথার দিকে খাটের পায়ার নিচে কিছু দিয়ে দেওয়া এতে শুধু মাথা উচু হবে না। পুরো শরীরের মাথার দিক থেকে পা পর্যন্ত  একটা নির্দিষ্ট ব্যালেন্সে উচু হবে।




প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি টোটকা:


আদা: গ্যাসের সমস্যায় আদা ব্যবহার হয়ে আসছে সেই প্রাচীন কাল থেকে।আদা দিয়ে ফোটানো পানি বা চা খেলে গ্যাসের সমস্যার সমধান হয়।এছাড়াও এতে মধু বা লেবুর রস মেশালে গ্যাসের পাশাপাশি বদহজমের সমস্যাও দূর হয়। তবে লেবুর রসে কারো কারো ক্ষেত্রে গ্যাসের সমস্যা বাড়তে পারে।তাই একবারে বেশি না খেয়ে প্রথম কয়েকদিন দেখা ভালো যে এতে কাজ টা ঠিক কেমন হচ্ছে।


আলু: আলুতে বিদ্যমান অ্যালকালাইন গ্যাসের সমস্যা দূর করে। একটা (ছোট সাইজের হলে দুইটা) আলুর রস বের করে তাতে গরম পানি মিশিয়ে  খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে দিনে ৩ বার পান করলে গ্যাসের সমস্যার সমাধান হয়। ফলাফল পেতে ২ সপ্তাহ পান করুন এই পানি।


পুদিনা পাতা: পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেলে বুক জ্বালাপোড়া , বমি বমি ভাব দূর হয়। চিবিয়ে খেতে সমস্যা হলে পুদিনা পাতা সেদ্ধ পানি খেতে পারেন।



জিরা : জিরা পানি বাজারেও বোতলজাত আকারে কিনতে পাওয়া যায়। বদহজমে নিমিষেই কাজ করে জিরা পানি।আধা লিটার পানিতে হাফ চামুচ জিরা মিশিয়ে ছেকে নিন।সকালে খালি পেটে খেয়ে নিলে উপকার পাবেন। জিরা হজমনাশক হিসেবে মারাত্নক কাজ করে।



 লবঙ্গ: গ্যাসের সমস্যায় লবঙ্গ খুব উপকারী।এছাড়াও সর্দি, ঠান্ডাতেও ভালো কাজ করে।এতে বিদ্যমান উপাদানগুলো হজমে সাহায্য করে এবং গ্যাসের ব্যাথা কমাতেও খুব কার্যকরী ।মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও কার্যকরী। তাই সার্বিকদিক বিবেচনায় ১-২ টা লবঙ্গ চিবিয়ে খাওয়া যেতেই পারে।



পরিশেষে বলতে হবে,সচেতনার বিকল্প নাই।আপনি যেই নিয়ম ই পালন করুন না কেনো সচেতন না হলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকবেই।তাই সচেতনতার বিকল্প নাই। কিছু কিছু ছোট ছোট অভ্যাস টার্গেট করে পরিবর্তন করুন, গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান হবে। ঘরোয়া উপাদানের ঔষধ গুলো সাময়িক মুক্তি দিতে পারে আপনাকে কিন্তু যদি  তেল,মশলাযুক্ত খাবার পর্যাপ্ত ঘুম,কিছু নিয়ম না মেনে চলতে পারেন তবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বারবার ফিরে আসবে।


 অতিরিক্ত সমস্যায় অবশ্যই ডাক্তারের সরন্নাপন্ন হোন।


জানতে হবে আরো কিছু:

💠শ্বাসকষ্টে করনীয় কী?

💠ব্লাক ফাঙ্গাসে সচেতন থাকা জরুরী কেন?




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন